ঢাকা ০১:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঁওড়ের ইজারা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

নাজমুস সাকিব, ঝিনাইদহ :
  • আপডেট সময় : ১০:৫০:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৫২১ বার পড়া হয়েছে

জেলেদের ভাষায় জলমহাল নীতিমালা লঙ্ঘন করে ঝিনাইদহে বাঁওড় ইজারা দেয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন মৎসজীবীরা। ইজারা বাতিল ও প্রকৃত জেলেদের মাঝে বাঁওড় ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের অফিস চত্বরে এই মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেন তারা।

মানববন্ধন শেষে এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন, বাঁওড় মৎস্যজীবী আন্দোলন বাংলাদেশের আহ্বায়ক নির্মল হালদার, সদস্য সচিব সুজন বিপ্লব, নিত্য হালদার, সাজ্জাদ হোসেন, আবু তোয়াব অপু ও তোফাজ্জেল লস্কার। প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাসুদেব বিশ্বাস। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে মৎস্যজীবীরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বাঁওড় ইজারা দেয়ার কারণে ঝিনাইদহের ৩০ হাজার মৎস্যজীবী পরিবার কর্ম হারিয়ে পথে বসেছেন। মৎস্যজীবীরা বাঁওড় জলমহালসমূহের ইজারা পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিল করে বাঁওড় জলমহালে জেলেদের ন্যায়সংগত মালিকানার ফিরিয়ে দিতে জলমহাল ব্যবস্থাপনা আইন সংশোধন করার দাবি জানান।

বাঁওড় মৎস্যজীবী আন্দোলন বাংলাদেশের আহ্বায়ক নির্মল হালদার জানান, বাঁওড় জলমহালে মাছ চাষে রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় অর্থায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে জেলেদের সাথে সরকারের ন্যায্য উৎপাদনের অংশীদারিত্ব চুক্তি থাকতে হবে। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় প্রকৃত বাঁওড় মৎস্যজীবীদের শুমারি করে তালিকাবদ্ধ করে মৎস্যজীবী কার্ড প্রদান করতে হবে।

বাঁওড় মৎস্যজীবী আন্দোলন বাংলাদেশের সদস্য সচিব সুজন বিপ্লব জানান, ঝিনাইদহে মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার ফতেপুর, কাঠগড়া, বলুহর, জয়দিয়া বাঁওড়, কালীগঞ্জ উপজেলার মার্জিত বাঁওড় ও যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার বেড় গোবিন্দপুর বাঁওড়ের ইজারা চুক্তি লঙ্ঘন করে সাবলীজ দেয়া হয়েছে। যা সরকারের প্রচলিত জলমহাল নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে দাবি মৎস্যজীবীদের। এসব বাঁওড় ছাড়াও ঝিনাইদহ জেলার অন্যান্য সব বাঁওড় ও জলাভূমি ইজারা দেয়ায় ভূমিহীন জেলে সম্প্রদায় জীবিকা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

মৎস্যজীবী নিত্য হালদার অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী ও বাণিজ্যিক মৎসচাষিরা বাঁওড়ের ইজারা হাতিয়ে নিয়ে বাঁওড়ে দেশীয় প্রজাতির মা মাছ ও ছোট কার্প জাতীয় মাছের পোনা নিধন করছে। ফলে দেশি পুটি, শিং, কৈ, পাবদা, ফলি, মেনি, খলিসা, খয়রা, টেংরা, বাটা, গুতুম, কাকিলা, দেশি সরপুটি, বাইন, শোল, টাকি ও গজার মাছ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বাঁওড়ে বাণিজ্যিক মৎসচাষিরা রাসায়নিক ও দ্রুত বর্ধনশীল ওষুধ প্রয়োগের ফলে বাঁওড়ের পানি দূষিত হয়ে পড়ছে।

সাধারণ জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, শত বছর ধরে জেলে সম্প্রদায় প্রাকৃতিক উপায়ে বাঁওড়ে মাছ উৎপাদন করে আসছেন। বাঁওড় ইজারা দেয়ায় প্রকৃত মৎস্যজীবী ও জেলে সম্প্রদায় কর্ম হারিয়ে পথে বসেছেন।

জেলেদের অভিযোগের বিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বকুল চন্দ্র কবিরাজ জানান, সরকারি নীতিমালা মেনেই বাওড়গুলো ইজারা প্রদান করা হয়েছে। তাই জেলে সম্প্রদায়ের এই অভিযোগ সঠিক নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

আমাদের প্রতিনিধি সম্পর্কে জানতে বার কোড স্ক্যান করুন

বাঁওড়ের ইজারা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

আপডেট সময় : ১০:৫০:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

জেলেদের ভাষায় জলমহাল নীতিমালা লঙ্ঘন করে ঝিনাইদহে বাঁওড় ইজারা দেয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন মৎসজীবীরা। ইজারা বাতিল ও প্রকৃত জেলেদের মাঝে বাঁওড় ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের অফিস চত্বরে এই মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেন তারা।

মানববন্ধন শেষে এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন, বাঁওড় মৎস্যজীবী আন্দোলন বাংলাদেশের আহ্বায়ক নির্মল হালদার, সদস্য সচিব সুজন বিপ্লব, নিত্য হালদার, সাজ্জাদ হোসেন, আবু তোয়াব অপু ও তোফাজ্জেল লস্কার। প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাসুদেব বিশ্বাস। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে মৎস্যজীবীরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বাঁওড় ইজারা দেয়ার কারণে ঝিনাইদহের ৩০ হাজার মৎস্যজীবী পরিবার কর্ম হারিয়ে পথে বসেছেন। মৎস্যজীবীরা বাঁওড় জলমহালসমূহের ইজারা পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিল করে বাঁওড় জলমহালে জেলেদের ন্যায়সংগত মালিকানার ফিরিয়ে দিতে জলমহাল ব্যবস্থাপনা আইন সংশোধন করার দাবি জানান।

বাঁওড় মৎস্যজীবী আন্দোলন বাংলাদেশের আহ্বায়ক নির্মল হালদার জানান, বাঁওড় জলমহালে মাছ চাষে রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় অর্থায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে জেলেদের সাথে সরকারের ন্যায্য উৎপাদনের অংশীদারিত্ব চুক্তি থাকতে হবে। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় প্রকৃত বাঁওড় মৎস্যজীবীদের শুমারি করে তালিকাবদ্ধ করে মৎস্যজীবী কার্ড প্রদান করতে হবে।

বাঁওড় মৎস্যজীবী আন্দোলন বাংলাদেশের সদস্য সচিব সুজন বিপ্লব জানান, ঝিনাইদহে মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার ফতেপুর, কাঠগড়া, বলুহর, জয়দিয়া বাঁওড়, কালীগঞ্জ উপজেলার মার্জিত বাঁওড় ও যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার বেড় গোবিন্দপুর বাঁওড়ের ইজারা চুক্তি লঙ্ঘন করে সাবলীজ দেয়া হয়েছে। যা সরকারের প্রচলিত জলমহাল নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে দাবি মৎস্যজীবীদের। এসব বাঁওড় ছাড়াও ঝিনাইদহ জেলার অন্যান্য সব বাঁওড় ও জলাভূমি ইজারা দেয়ায় ভূমিহীন জেলে সম্প্রদায় জীবিকা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

মৎস্যজীবী নিত্য হালদার অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী ও বাণিজ্যিক মৎসচাষিরা বাঁওড়ের ইজারা হাতিয়ে নিয়ে বাঁওড়ে দেশীয় প্রজাতির মা মাছ ও ছোট কার্প জাতীয় মাছের পোনা নিধন করছে। ফলে দেশি পুটি, শিং, কৈ, পাবদা, ফলি, মেনি, খলিসা, খয়রা, টেংরা, বাটা, গুতুম, কাকিলা, দেশি সরপুটি, বাইন, শোল, টাকি ও গজার মাছ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বাঁওড়ে বাণিজ্যিক মৎসচাষিরা রাসায়নিক ও দ্রুত বর্ধনশীল ওষুধ প্রয়োগের ফলে বাঁওড়ের পানি দূষিত হয়ে পড়ছে।

সাধারণ জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, শত বছর ধরে জেলে সম্প্রদায় প্রাকৃতিক উপায়ে বাঁওড়ে মাছ উৎপাদন করে আসছেন। বাঁওড় ইজারা দেয়ায় প্রকৃত মৎস্যজীবী ও জেলে সম্প্রদায় কর্ম হারিয়ে পথে বসেছেন।

জেলেদের অভিযোগের বিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বকুল চন্দ্র কবিরাজ জানান, সরকারি নীতিমালা মেনেই বাওড়গুলো ইজারা প্রদান করা হয়েছে। তাই জেলে সম্প্রদায়ের এই অভিযোগ সঠিক নয়।